অতিরিক্ত শুল্কায়নের প্রতিবাদে তামাবিল স্থলবন্দরসহ সিলেটের সবকটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে কোলাহলহীন শূন্যতা ভর করেছে স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলোতে। গত ৮দিন ধরে আমদানি বন্ধ থাকায় সরকার প্রায় ২৪ কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারিয়েছে। আমদানি না হওয়ায় শ্রমিকরা যেমন বেকার হয়ে পড়েছেন, তেমনি ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।
সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট গত ৪ জানুয়ারি এক চিঠিতে বোল্ডার পাথরে ন্যূনতম ১৩ ডলার, চিপস পাথরে ১৪ ডলার এবং লাইমস্টোন আমদানিতে ন্যূনতম সাড়ে ১৩ ডলার নির্ধারণ করে শুল্কায়নের নির্দেশনা দেয়।
আগে সিলেটের শুল্ক স্টেশনগুলোতে ১১.৭৫ ডলারের মধ্যে শুল্কায়ন করা হতো। কাস্টমস কমিশনারেটের এই চিঠির পর ৮ জানুয়ারি থেকে অতিরিক্ত শুল্কায়নের প্রতিবাদে আমদানি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বন্ধ হয়ে যায় আমদানি নির্ভর তামাবিলসহ সিলেটের ১৩টি শুল্ক স্টেশনের কর্মব্যস্ততা।
আমদানি না থাকায় এর সাথে জড়িত শ্রমিক, চালকরা বেকার হয়ে পড়েন। দৈনিক হাজিরার কাজ বন্ধ হয়ে পড়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সন্তানদের লেখাপড়া, খাবার খরচ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন তারা।
তামাবিল চুনাপাথর, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সহসভাপতি মো. জালাল উদ্দিন বলেন, দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে যে মানের পাথর আমদানি হয়, সিলেট থেকে তা হয় না। সিলেটের বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে ৮ থেকে ১০ ডলার দামে প্রতি মেট্রিকটন পাথর আমদানি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমস ক্রয়মূল্য থেকে বেশি মূল্যে এসেসমেন্ট করে আসছে। ৪ মাস আগেও বাড়ানো হয় এসেসমেন্ট
ভ্যালু।
তামাবিল চুনাপাথর, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন ছেদু বলেন, আমরা ক্রয়মূল্য থেকে বেশি মূল্য ধরে শুল্কায়ন করে আসছি। এভাবে দফায় দফায় এসেসমেন্ট ভ্যালু বাড়ানোর কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ডলার সংকটের কারণেও ভোগান্তিতে পড়ছে হচ্ছে আমাদের।
ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পাথর আমদানি করে থাকি। যা থেকে সরকার দৈনিক প্রায় ৩ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আহরণ করে। এই আমদানির সাথে বিভিন্ন ধরণের শ্রমিক যেমন পাথর শ্রমিক, হ্যামার শ্রমিক, ক্রাশার মিলের শ্রমিক ও পরিবহন শ্রমিক জড়িত। আমদানি বন্ধ থাকায় লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
সিলেট চেম্বারের পরিচালক মজিবুর রহমান মিন্টু বলেন, এদিকে দেশে দফায় দফায় এসেসমেন্ট ভ্যালু বাড়ানোর খবরে ভারতের রফতানিকারকরা পাথরের মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। এটা হলে অতিরিক্ত শুল্কায়নের সাথে মরার ওপর খাড়ার গা হিসেবে পাথরের আমদানি মূল্য বেড়ে যাবে। আমরা অতিরিক্ত শুল্কায়ন বন্ধের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
পাশাপাশি বিভিন্ন শুল্কস্টেশনের শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে তামাবিলসহ বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনের কাস্টমসের দায়িত্বশীলরা এসেসমেন্ট ভ্যালু বাড়ানো সংক্রান্ত চিঠির কথা স্বীকার করলেও কথা বলতে রাজি হননি। তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ রেখেছেন। আমদানি হলে অফিসিয়াল নির্দেশনা মেনে তারা শুল্কায়ন করবেন।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুল্কায়ন নিয়ে কাস্টমস-ব্যবসায়ী দুরত্ব না মিটলে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাবে, তেমনি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত
হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সৌজন্যে : সময়ের আলো