Bangla24.Net

কাঁচামরিচের হাইজাম্প, বেগুনের সেঞ্চুরি

বাজারে ভোগ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যের কষ্ট দেশের মানুষের আর শেষ হচ্ছে না। একটির পর একটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে একেবারে পর্বতের চূড়ায় উঠেছে। এতদিন শাক-সবজির দাম কিছুটা নাগালের মধ্যে থাকলেও এ সপ্তাহে এসে সবজির দামও বেড়েছে লাগামছাড়া। অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়ে কাঁচামরিচ রীতিমতো ‘হাইজাম্প’ দিয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা। সেই সঙ্গে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বেগুন হাঁকিয়েছে সেঞ্চুরি।

এ ছাড়াও বাজারে সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে। যেমন-শীতের অগ্রিম সবজি হিসেবে বাজারে আসা শিমের দাম গত সপ্তাহে ছিল বাজারভেদে ১৫০ থেকে ১৮০, এ সপ্তাহে বেড়ে হয়েছে তা ২০০ থেকে ২২০ টাকা। গত সপ্তাহে বরবটির কেজি ছিল ৬০ থেকে ৭০, এ সপ্তাহে হয়েছে ৯০ থেকে ১০০, করলার কেজি এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ৭০, এখন হয়েছে ৮০ থেকে ১০০, গাজরের কেজি গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১২০, এ সপ্তাহে হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০, মুলার কেজি গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০, এ সপ্তাহে হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

শুক্রবার রাজধানীর কল্যাণপুর নতুন বাজার, শেওড়াপাড়া বাজার, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে সবজির মূল্য বৃদ্ধির এ চিত্র দেখা যায়।

সবজির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতার কষ্টের মাত্রাও আরও বেড়ে গেল। ক্রেতারা বলছেন, মাছ-মাংস, মুরগি-ডিম, চাল-ডাল, তেল-চিনি, আলু-পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দামে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়ে আকাশচুম্বী হয়েছে। অনেক পরিবারই মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে তিন বেলার আহারে সবজিনির্ভর হয়ে গেছে। এখন সবজিও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এসব পরিবারের কাছে।

এমন তথ্য জানিয়ে কল্যাণপুর নতুন বাজারের ক্রেতা শেখ নাজমুল আলম বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। মাসে বেতন পাই ৩০ হাজার টাকা। খাদ্যপণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার পর যা থাকে তার পুরোটা দিয়েও মাসের খাবার খরচের অর্ধেকও কুলানো যায় না। আমি গরুর মাংস কেনা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছি। মাছের মধ্যে রুই-কাতলা এবং ইলিশও কিনতে পারি না। তেলাপিয়া-পাঙাশ আর মাঝেমধ্যে পোনা মাছ কিনে কোনোরকম সন্তানের মুখে আহার দিতে পারি তিন বেলার। এসব মাছের মধ্যে সবজির পরিমাণ বেশি দেওয়া ছাড়াও সবজি দিয়েই বেশি আহার হতো তিন বেলার। তবে এখন সবজির দাম যেভাবে বেড়েছে, হয়তো সবজি খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে। আমি বুঝি না, ব্যবসায়ীরা একের পর এক পণ্যের দাম বাড়িয়ে এভাবে লুটপাট করে দেশের মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে অথচ দেখার কেউ নেই। পণ্যমূল্যে দেশের মানুষের কষ্টের কথা সেভাবে কাউকে বলতে শুনছি না।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, দেশি পেঁয়াজ, ভারতীয় পেঁয়াজ, বেগুন, মুলা, লালশাক, পালংশাক, পটোল, ঢেড়স, বরবটি, ঝিঙা, পেঁপে, আলু, করলা, কচু এবং শসাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিতে ভরপুর। কিন্তু দাম বেড়েই চলেছে। বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এ ছাড়া পটোল ৬০, ঢেঁড়স ৬০, পেঁপে ৪০, ঝিঙে ৬০, ধুন্দল ৬০, কচুরমুখি ৯০ এবং কচুর লতি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি পিস জালি কুমড়া (চাল কুমড়া) ৬০ টাকা ও লাউ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা কবীর হোসেন সবজির দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বলেন, হঠাৎ করেই বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে, কেন কমেছে সেটি আমিও জানি না। সরবরাহ কমার কারণেই গত সপ্তাহের চেয়ে সব ধরনের সবজির কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। মূলত বিগত কয়েক দিন দেশে কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে মরিচের অনেক জমিতে পানি জমে নষ্ট হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ জন্যই কাঁচামরিচের দাম বেশি বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, দাম বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো-বাজারে সার-কীটনাশকের দাম অনেক বেশি। তা ছাড়া মজুরির দামও বেড়েছে। সব মিলিয়ে কৃষক পর্যায়েই এখন দামটা কিছুটা বেশি। সেটা যখন বিভিন্ন হাত ঘুরে আমাদের কাছে আসে, স্বাভাবিকভাবেই দামটা বেশি হওয়ার কথা। এ ছাড়া ৩ দিনের টানা ছুটিরও কিছুটা প্রভাব পড়েছে।

অন্যান্য পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি
অন্যদিকে বাজারে সরকারের বেঁধে দেয়া দামে এখনও মিলছে না ডিম, আলু এবং পেঁয়াজ। লাল ডিমের ডজন ১৫০, হাঁসের ডিম ২২০ এবং দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৮০০ এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু ৪৫-৫০ এবং পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে বাড়তি দামে আটকে আছে চালের বাজার। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০-৮০, আটাশ চাল ৫৫-৬০, মোটা চাল ৪৫-৫০, নাজিরশাল ৭০-৮৫, বাসমতি চাল ৮৯-৯০, চিনিগুঁড়া চাল ১২০-১৫০, কাটারি ৮০-৯০, আমন ৬৫, আউশ ৭৫ ও জিরাশাইল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পণ্যমূল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রায় ৩ বছর ধরে দেশের বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। এ বিষয়ে কথা বলতে বলতে আমাদের মুখ ব্যথা হয়ে গেল, অথচ সরকারের কোনো টনক নড়ল না। সরকার বা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ব্যর্থতার সুযোগে ব্যবসায়ীরা দিনকে দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পর এখন সবজির দামও বাড়ছে। এক কেজি কাঁচামরিচ যদি দেশের মানুষকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় কিনে খেতে হয়, এক কেজি বেগুন যদি ১০০ টাকায় কিনে খেতে হয়, তা হলে কীভাবে বাঁচবে দেশের সাধারণ মানুষ। যদিও আমরা বছরের পর বছর এ বিষয়গুলো সরকারের নজরে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি, তবুও বলব-দয়া করে বাজারের দিকে সুনজর দিন, দেশের মানুষকে বাঁচান।

সৌজন্যে : সময়ের আলো

শেয়ার