Bangla24.Net

রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

থার্ড টার্মিনালের কাজ শেষ হচ্ছে এপ্রিলে, চালু অক্টোবরে

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের তৃতীয় টার্মিনালের শতভাগ কাজ শেষ হওয়ার পথে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। আগামী ৬ এপ্রিল টার্মিনালটি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) বুঝিয়ে দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর আগামী অক্টোবর মাসে টার্মিনালটির আংশিক বাণিজ্যিক অপারেশন চালু হবে।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেয়ার জন্য আগস্ট মাসের মধ্যে চুক্তি হবে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তারা বুঝে নেয়ার ছয় মাস পর টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে। চালু করার আগে বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ৬ হাজার জনবল নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

এ জন্য শুরুতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে দিয়েই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। থার্ড টার্মিনালকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অন্তত ১০টি বিমান সংস্থা এই টার্মিনাল থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে। আগামী বছর পুরোপুরি চালু হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে প্রতিদিন ৬ হাজারের অধিক শ্রমিক কাজ করছে। এরই মধ্যে টার্মিনালের সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও ক্যালিব্রেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা একাধিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন থার্ড টার্মিনালকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখান থেকে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এতদিন এয়ার সার্ভিস চুক্তি ছিল ৫৪টি দেশের। থার্ড টার্মিনালকে কেন্দ্র করে ইজিপ্ট এয়ার ও কোরিয়ার এয়ার প্রিমিয়া ফ্লাইট শুরু করেছে, মে থেকে চালাবে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, অপেক্ষায় আছে রিয়াদ, কুয়েত, জর্ডান এবং আফ্রিকান এয়ারলাইন্সসহ ১০টি প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও সুইস এয়ার ফ্লাইট চালাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বেবিচক জানিয়েছে, অত্যাধুনিক এ টার্মিনালে যাত্রীকে বিশ্বমানের সেবা দেয়ার জন্য জিটুজি ভিত্তিতে জাপানি কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও অনেক দূর এগিয়েছে। আগস্ট মাসের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। চুক্তির ছয় মাস পর টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে। তবে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা চার শিফটে টার্মিনালটি সচল রাখতে প্রায় ছয় হাজার প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এ জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হলে টার্মিনাল পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে।

অন্যদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সেই অভিযোগ থেকে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দেওয়ার জন্য জাপানি প্রতিষ্ঠানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

বিমান বলছে, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তারা শাহজালালের দুটি টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে থার্ড টার্মিনালে সেবা দিয়ে স্থায়ীভাবে সুযোগটি পেতে চায় তারা। চূড়ান্তভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার আগে তারা নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করে দেখাতে চায় সংস্থাটি। এ জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিমানের সিইও শফিউল আজিম।

সময়ের আলোকে তিনি বলেন, থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার বিষয়ে পিপিপি অথরিটি কাজ করছে। এই সেবা দেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমরা এই সেবা দিতে চাই। তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমানের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও জনবল রয়েছে, জনবলের ট্রেনিংও করানো হয়েছে। আমরা সেবার মান ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যা যা করার দরকার করছি। আপনারা দেখছেন, দিন দিন সেবা ইম্প্রুভ করছি।

থার্ড টার্মিনালের সব ধরনের কাজ প্রায় শেষ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক একেএম মাকসুদুল ইসলাম। তিনি বলেন, অল্প কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তা নির্ধারিত সময় অর্থাৎ আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই শেষ হবে। এরপর টার্মিনালটি বুঝে নেবে বেবিচক।

বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, চলতি বছরের এপ্রিলে থার্ড টার্মিনাল বুঝে নেব আমরা। অক্টোবরে থার্ড টার্মিনাল চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। কিন্তু এটি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত জনবল সিভিল অ্যাভিয়েশনের নেই। আমাদের যেটি আছে, সেটি দিয়েই ইমিগ্রেশন, কাস্টমস সব চালু করে দেব। তখন বিমানবন্দরটি যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। পরে জাপানি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত হলে পুরোপুরি চালু হবে। তবে এখনই পুরোপরি চালু করা সম্ভব হবে না। থার্ড টার্মিনালকে কেন্দ্র করে অনেক বড় বড় এয়ারলাইন্স আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, থার্ড টার্মিনালকে কেন্দ্র করে অনেক বড় বড় এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফ্লাইট বৃদ্ধি করার কথা বলছে। তৃতীয় টার্মিনাল এখন ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণের জন্য প্রায় প্রস্তুত। আগামী অক্টোবরে টার্মিনালটি পুরো চালু হলে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর কার্যক্রম বাড়বে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের অক্টোবরে অনুমোদিত হয়। এটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিতা করপোরেশন এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ের জয়েন্ট ভেঞ্চার ‘অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’।

বিমানবন্দরটি এত দিন বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দিলেও নতুন এ টার্মিনাল চালু হলে বছরে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে। এখানে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। ১৬টি ব্যাগেজ বেল্টসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা রয়েছে নতুন এ টার্মিনালে। ২০২৪ সালের অক্টোবরের দিকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে এটি।

সৌজন্যে : সময়ের আলো

শেয়ার