২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার (ডিআইটিএফ) পর্দা নেমেছে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি)। এবারের মেলায় আনুমানিক ৪০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে, যা গতবছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। এছাড়া মেলায় রপ্তানি আদেশ মিলেছে প্রায় ৩৯১ কোটি ৮২ লাখ টাকার। এটি গত বছরের তলনায় ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।
রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আয়োজিত ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে গতকাল মঙ্গলবার এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে ২১ জানুয়ারি থেকে এ মেলা শুরু হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল মেলার সময় আরও তিনদিন বৃদ্ধির। এ জন্য মেলায় অংশ নেয়া ব্যবসায়ীদের ব্যানারে সম্প্রতি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ব্যবসায়ীরা। তবে তাদের দাবিতে সাড়া দেননি ইপিবি। নির্ধারিত সময়েই মেলার পর্দা নামানো হলো।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমরা ৬৮ হাজার গ্রামের প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত ১০ জন করে কারিগর তৈরি করতে চাই। এতে ছয় লাখেরও বেশি মানুষের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, এই সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন করেন। তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়ে উদ্বোধন করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন। এছাড়া বিভিন্ন পণ্য কিনে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেন তিনি। মাসব্যাপী এই লাখ মানুষের মিলনমেলার ক্ষেত্র তৈরি করে দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া তিনি বর্ষ পণ্য হিসেবে হস্তশিল্পকে ঘোষণা করেন। এখানে যারা শিল্পী ও কারিগর রয়েছেন সবাইকে তিনি ধারণ করেন। উনি সবসময় আমাদের অনুপ্রাণিত করেন কীভাবে আমাদের শিল্পকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়। আমাদের পরিকল্পনা আছে হস্তশিল্পকে সারা বছর ফোকাস করা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আগামীতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হতে পারে ৩-৫ দিনব্যাপী। মাসব্যাপী মেলায় বিদেশিরা পণ্য নিয়ে আসতে চান না। এ জন্য সময় কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনা চলছে।
আর মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত মেলার নাম ঢাকা বাণিজ্য মেলা নামে হতে পারে বলেও জানান তপন কান্তি ঘোষ। বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানেই এ প্রস্তাবে একমত প্রকাশ করেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
এ সময় বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও অর্থনৈতিক চাপে আছে। বৈদেশিক মুদ্রার চাপে আছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মানুষের চয়েস কমানো যাবে না, উৎপাদন বাড়াতে হবে, আমদানি বাড়াতে হবে।
২০২৬ সালের পর থেকে বাংলাদেশ বেশ কিছু জায়গায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে জানিয়ে সচিব বলেন, সেটি মোকাবিলা করতে পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে হবে। শ্রমিকদের মর্যাদা দিতে হবে।
মেলার শেষ দিনে বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নে বিভিন্ন অফার চললেও ক্রেতাদের চাপ তুলনামূলক অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিল, শেষ দিনে সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকবে। তবে তার বিপরীত চিত্র লক্ষ করা গেছে মেলা প্রাঙ্গণে। ক্রেতাদের চাপ কম থাকায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীকে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।
দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে বাণিজ্যমেলা আয়োজিত হয়ে আসছে।
ইপিবি’র (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো) পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেলায় মোট ৩০৪টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ৫টি দেশের ৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। দেশগুলো হলো- ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর। এবারের বাণিজ্যমেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ছিল ৩৫১টি; যা বিগত বছরে ছিল ৩৩১টি। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩০০ বর্গফুট আয়তনের দুইটি হলে (এ ও বি) ১৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
সেন্টারের প্রধান ফটকের পূর্বপাশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল ছিল ৬২টি। হলের পেছনে ফরেন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন এবং প্রিমিয়ার ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল ছিল ৫৩টি।
সেন্টারের মূল কম্পাউন্ডের বাইরে ৬ একর জমির একাংশে ফুড জোনে ৩২টি রেস্তোরাঁ ও মিনি রেস্তোরাঁ এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল ছিল ৬২টি।