হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজার সংলগ্ন সুতাং নদীতে একটি সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকোই এখন যোগাযোগের এক মাত্র ভরসায় পরিণত হয়েছে। এ সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষকে। প্রায় ২০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে এই সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় ১৫০ মিটার লম্বা এই বাঁশের সাঁকোর অবস্থা অনেকটাই নড়বড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো দিয়ে বেগুনাই, মাদনা, বলাকান্দি, ভবানীপুর, ভরপূর্ণি, কাটাইয়া, মকসুদপুর, পশ্চিম বুল্লা, পূর্ব বুল্লা, তেঘরিয়া, সিংহগ্রাম, বামৈ গ্রামসহ যাতায়াত করছেন প্রায় ২০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। এ ছাড়াও অষ্টগ্রাম ও বানিয়াচং উপজেলার আদমপুর, নুরপুর সুজাতপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজনও এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন। একটি সেতুর অভাবে এই এলাকার মানুষ তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, নড়বড়ে এই সাঁকো প্রতিবার পাড়ি দিতে গুনতে হয় টাকা। বর্তমানে জনপ্রতি ৫ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যুগ যুগ ধরে স্থানীয় রবি দাশ সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের নেতৃত্বে ও খরচে সাঁকো তৈরি করে থাকেন। পারাপার হতে জনপ্রতি আগে ২ টাকা নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে ৫ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবার সেতু পারাপারের সময় দিতে হয় এই টাকা। টাকা তোলেন সাঁকো নির্মাণকারী লোকজন।
সাঁকো পারাপারে টাকা উত্তোলনে নিয়োজিত রুহি দাশ বলেন, দৈনিক হাজার তিনেক টাকা ওঠে। এতে আমাদের ৩টি পরিবারের সংসার চলে। জনপ্রতি ৫ টাকা করে আদায় করা হয়। তবে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কোনো টাকাপয়সা নেয়া হয় না।
লাখাই উপজেলা প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন বলেন, সাঁকোর একটি ছবি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে দিন। আমি ছবি দেখার পর স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ আমার অফিস স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে বুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোকন চন্দ্র গোপ বলেন, বছর দেড়েক আগে এই জায়গায় সেতু নির্মাণের জন্য মাপামাপির কাজ করেছিল উপজেলা এলজিইডি অফিস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এই জায়গায় সেতু তৈরি হয়নি। আশা করি, এখানে সেতু তৈরি করা হবে। এ ব্যাপারে আমি উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলব।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও মিলছে না কোনো সমাধান। বর্ষা মৌসুমে নদীতে বেশি পানি থাকলে খেয়া নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হওয়া গেলেও বছরের বেশিরভাগ সময়েই নদীতে পানি কম থাকে। তাই তাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। অবশ্য বিকল্প পথে ইউনিয়ন পরিষদ, থানা, হাসপাতাল, উপজেলা শহর ও বাজারে যাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের মানুষকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়, গুনতে হয় বাড়তি টাকা।
অন্যদিকে এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করলে অনেক পথ কম ঘুরতে হয়। এতে সময় ও খরচ দুটোই বাঁচে, হয়রানিও কম হয়। এই সাঁকোর জায়গায় একটি সেতু নির্মাণ করা হলে হাজার হাজার মানুষের প্রতিদিনের কষ্ট লাঘব হবে। সেতুর অভাবে কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন দিকে পিছিয়ে আছে এই গ্রামগুলোর মানুষ।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী রবিন বলেন, বর্ষাকালে নদীতে পানি বাড়লে নৌ চলাচলের জন্য সাঁকো তুলে ফেলা হয়। পরে নদীর পানি কমে এলে স্থানীয় রবি দাশ সম্প্রদায়ের লোকজন সাঁকো তৈরি করে পারাপারের জন্য। সাঁকোর মাঝেমধ্যে অনেক জায়গা ভেঙে গেছে। এখন আমাদের স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হয়।