Bangla24.Net

বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে পেঁয়াজের ঝাঁজ আরও বাড়লো

আলু-পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফিরলো না। উল্টো পেঁয়াজের ঝাঁজ আরো বাড়লো। মাঝে কিছু দিন আলু ও পেঁয়াজের কেজিতে ১০ টাকা কমলেও এখন আবার আগের জায়গায় ফিরেছে। বাজারে আবারও এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ১১০ টাকা।

এছাড়া আলুর কেজি ৫০ টাকা থেকে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। তবে গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে বাজারে দাম কমেছে সব ধরণের সবজির। এছাড়া গরুর মাংস, মাছ, মুরগি, ডিম এবং চাল-ডালের বাজার উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

গত ছয় মাস ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় ঠেকেছিল। যা ৬ মাস আগেও ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ভরতীয় পেঁয়াজের কেজি বেড়ে হয়েছিল ১২০ টাকা, যাত ছয় মাস আগে ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা। তবে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় দিন দশেক আগে কেজিতে ১০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকায় নেমেছিল, কিন্তু এ সপ্তাহে আবারো কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজের দাম আবারো ১৫০ টাকা হয়েছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় ঠেকেছে।

ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল দেশি পেঁয়াজের দাম কমাতে কিংবা দেশি পেঁয়াজের দাম না কমা পর্যন্ত সাধারণ মানুষ যেনও কম দামে ভারতীয় পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারে। কিন্তু দিন দিন এই চিত্র পালটে যাচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজই এখন দাম বৃদ্ধিতে দেশি পেঁয়াজকে টক্কর দিতে শুরু করেছে।

দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে পেঁয়াজ বিক্রেতারা বলেন, পেঁয়াজের দাম কেন বেড়েছে বলতে পারছি না। তবে নতুন পেঁয়াজ না উঠা পর্যন্ত যে সবার বেশি দামে পেঁয়াজ খেতে হবে সেটা বুঝতে পারছি। আর পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের দাম কমবে সে আশা ছেড়ে দিয়েছি। অল্প কিনি অল্প খাই। এছাড়া আজকে ভারতীয় আদা ২০০ টাকা, দেশি রসুন ২২০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। বাজারে এখন শিম ৫০-৬০ টাকা, শালগম ৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৬০ টাকা, পাকা টমেটো ১২০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা ৯০-১২০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, গাজর ৮০-১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৪০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৭০ টাকা, শসা ৫০-৮০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, করল্লা ৮০, পেঁপে ৪০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা , ঢেঁড়স ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা ও চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে। এক্ষেত্রে দেখা যায়—শিম ও লাউয়ের দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে। গত সপ্তাহে এসবের দাম ছিল ৬০ কেজি ও প্রতি পিস।

বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী, ১৫০০-১৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ১২০০-১৪০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগি ১৬২-১৭৮ টাকা, কক মুরগি ২৫৬-২৬৩ টাকা, লেয়ার মুরগি ২২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০ টাকা, সাদা ডিম ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের দাম কমেছে ২৫০-২৮০ টাকা।

মাছ বিক্রেতারা বলেন, গরুর মাংসের দাম কমে যাওয়াতে মানুষ মাছ কম কিনছে। তবে বেশি দিন এরকম হবে না। কারণ, মাছ প্রতিদিন খাওয়া যায়, মাংস খাওয়া যায় না, ভালো লাগে না। গরুর মাংস বিক্রেতা মো. সুলতান বলেন, দাম কমার পর অনেক ক্রেতা বেড়েছে। রেস্ট নেওয়ার সময় নাই। মাংস কিনতে আসা জুয়েল বলেন, গরুর মাংস তো ধরাছোঁয়ার প্রায় বাইরে চলে গিয়েছিল। এখন দাম কিছুটা কমেছে বলেই কিনছি।

এছাড়া গত সপ্তাহের মতো অপরিবর্তিত দামেই বিক্রি হচ্ছে মুদি দোকানের পণ্য। আজকে ছোট মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১৫ টাকা, মুগ ডাল ১৪৫ টাকা, খেসারি ডাল ৯৫ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪২ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চলতি বছরের আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। তাতে চালের বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। মোটা চালের দাম আগের মতো রয়েছে। প্রতি কেজি মোটা চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। অর্থাৎ নতুন চাল বাজারে এলেও মাসখানেক আগে যে খুচরা পর্যায়ে সবধরনের চালের দর কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছিল, এখনও সেই দরেই বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়ায় আটা ও ময়দার দামও বেড়েছে। খোলা আটা কিনতে এখন ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে কেজিতে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। আর প্যাকেট আটার কেজি কিনতে খরচ হচ্ছে কমবেশি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। একইভাবে খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৫ এবং প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে অস্থিতিশীল চিনির বাজারে কোনো সুখবর নেই। খোলা চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে। অন্যদিকে বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ নাই বললেই চলে। মিললে তার জন্য গুনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা।

সূত্র : সময়ের আলো

শেয়ার