দেখতে দেখতে দুই বছর হতে চলল, তবুও স্মৃতিতে তা টাটকা। আসলে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে যা করেছিল টিম বাংলাদেশ, সেই সুখস্মৃতি দুয়েক বছরে পুরোনো হওয়ার নয়! টেস্ট ক্রিকেটে যখনই প্রতিপক্ষের নাম হবে নিউজিল্যান্ড, টিম বাংলাদেশের মাউন্ট মঙ্গানুই রূপকথা তখন ঘুরেফিরে আসবেই। এলো রোববারও। কিন্তু এতে বিরক্তই হলেন টাইগার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিনি আসলে পেছন ফিরে দেখতে চান না, তার দৃষ্টি কেবলই সমুখে।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে পেছনের প্রশ্নটা তাই বারবারই এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন হাথুরু। শেষতক আর পারেননি। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েই বললেন, ‘আপনারা মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট নিয়ে কথা বলছেন, কেন? কত আগের কথা সেটা? হাথুরুর কাছে ওটা অনেক আগেরই মনে হওয়ার কথা, কেননা তখন তিনি বাংলাদেশ শিবিরে ছিলেন না। ওই টেস্টে দলে ছিলেন না সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালও। তবুও স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। সাদা পোশাক আর লাল বলের ক্রিকেটে ওই জয়টা অনুপ্রেরণার বড় উৎস হয়েই আছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে ব্যর্থ বিশ্বকাপ মিশন শেষে নিজ আঙিনায় ‘অস্বস্তিকর’ সংস্করণে ভালো কিছু করতে টাইগারদের এখন অনুপ্রেরণাই আগে প্রয়োজন। তবুও অতীতে তাকাতে নারাজ হাথুরু। ভিন দেশে পাওয়া জয় নিয়েও তিনি নির্বিকার। কেন? তা যুক্তি দিয়েই বোঝাতে চাইলেন তিনি। ‘অচেনা’ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামও যে ‘বিদেশ’ সমতুল্য, টাইগার কোচ সেটাও বুঝিয়ে দিলেন, ‘অন্য একটা দেশের কথা বলছেন আপনারা। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন খেলা।
আমরা এখানে (সিলেট) খুব বেশি টেস্ট খেলিনি। একটি টেস্ট খেলেছি, যদি আমি ভুল না করে থাকি। আমরা জানি না উইকেট কেমন আচরণ করবে। কারণ আমাদের এখানে খেলার ইতিহাস নেই। এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সবই অচেনা।’
নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, তারকা পেসার তাসকিন আহমেদ, কিপার-ব্যাটার লিটন দাস, তামিম ইকবাল এবং ইবাদত হোসেনের অনুপস্থিতিতে টাইগারদের বর্তমান দলটাকেও অনেকটা অচেনাই ঠেকার কথা হাথুরুর কাছে। কয়েক দিন ধরে একগাদা নতুন মুখকেই শিবিরে দেখছেন তিনি। নতুনদের নিয়েই সামনে দৃষ্টি দিচ্ছেন টাইগার কোচ, ‘এতজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে না পাওয়া যেকোনো দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং।
বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। কারণ তারা সবাই তিন সংস্করণেই খেলে। কেউ ১৫ বছর ধরে খেলছে, কেউ ১০ বছর। এ জন্য বলছিলাম, একটা দিক থেকে আমরা সামনে তাকাতে পারি। তরুণরা সেটা করতে পারে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার এটাই সঠিক সময়।’
তরুণদের জন্য সিরিজটাকে দারুণ এক সুযোগ বলেই মনে করছেন হাথুরু, ‘কয়েকজন ক্রিকেটার লম্বা সময় ধরে খেলছে। তারা সারা জীবন খেলবে না। এটা অবশ্য অনেক কারণে ঘটেছে। আমার মনে হয়, এটা রোমাঞ্চকর। নিজেদের মেলে ধরার জন্য তরুণদের জন্য ভালো সুযোগও।’ নতুন চেহারার এই বাংলাদেশের অধিনায়কও নতুন, নাজমুল হোসেন শান্ত। কয়েক দিন পর হয়তো তিনিই দলের নিয়মিত অধিনায়ক হবেন।
তাই তার জন্যও সুযোগ দেখছেন কোচ, ‘নতুন অধিনায়কের জন্য এটি সুযোগ নিজের নতুন লিডারশিপ গ্রুপ এবং নেতৃত্বের ধরন তৈরি করার। তার জন্য এটি যেমন সুযোগ, তেমনি অন্য ক্রিকেটারদের জন্যও সুযোগ-যেভাবে সে (শান্ত) নেতৃত্ব দেয়, সেটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার।’
টেস্ট ক্রিকেটটাও আবার নতুন ঠেকার কথা হাথুরুর এই নতুন শিষ্যদের কাছে। শুধু তারাই নন, অন্যরাও লম্বা সময় ধরে আছেন টেস্টের বাইরে। তবে জাতীয় লিগ খেলায় ক্রিকেটারদের ভালো প্রস্তুতি হয়েছে বলেই মনে করছেন টাইগার কোচ। নতুন চেহারার এই দলকে নিয়ে রোমাঞ্চিত তিনি, ‘এই দলটা একদমই নতুন চেহারার বাংলাদেশ দল। বিভিন্ন কারণেই এটা হয়েছে। কিছু চোট। আমি মনে করি, আমরা যতটা সম্ভব প্রস্তুত।’