Bangla24.Net

বেড়েই চলেছে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি

নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চলেছে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি। বিদায়ি আগস্ট মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ ছাড়া এই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে।

আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে। যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া যায়। আগস্ট মাসে খাদ্যপণ্যে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্ট মাসে যে খাদ্যপণ্য কিনতে ১০০ টাকা খরচ করতে হতো ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে সেই একই পণ্য কিনতে খরচ করতে হয়েছে ১১২ টাকা ৫৪ পয়সা।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও তা কার্যকর নয় বলে বারবার বলে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরালো করতে হবে, ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়ে দিতে হবে, টাকা ছাপানো বন্ধ করতে হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু সরকার এদিকে মনোযোগী নয় বলে অভিযোগ তাদের।

বিবিএসের হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগস্টে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা গত বছরের আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০২১ সালের আগস্টে ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য মতে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ ছাড়া শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে, যা জুলাইয়ে ছিল ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, জুনে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও মে মাসে বেড়ে হয়েছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত মে মাসের এ হার প্রায় এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এদিকে গত আগস্ট মাসে মজুরির হার সামান্য বেড়ে ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা জুলাইয়ে ছিল ৭ দশমিক ৫২ এবং জুন মাসে ছিল ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগস্টে কৃষি খাতে মজুরি বাড়লেও কমেছে শিল্প ও সেবা খাতে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কৃষি খাতে আগস্টে মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮৯ এবং জুলাইয়ে ছিল ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২২ সালের আগস্টে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

কিন্তু শিল্প খাতে আগস্টে মজুরি হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশে যা জুলাইয়ে ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২২ সালের আগস্টে ছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এদিকে সেবা খাতে মজুরি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ, যা জুলাইয়ে ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২২ সালের আগস্টে এ হার ছিল ৭ শতাংশ।

অর্থাৎ যে হারে মজুরি বেড়েছে তার তুলনায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। সহজভাবে বলতে গেলে গত আগস্ট মাসে একজন ব্যক্তি ৭ টাকা ৫৮ পয়সা বেশি মজুরি বা আয় করলেও তার খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ৯২ পয়সা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ২ টাকা ৩৪ পয়সা ব্যয় বেড়েছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের সর্বপ্রথম মনিটরিং পলিসি ও সিস্টেম ঠিক করতে হবে। সরকারের ব্যয় মেটাতে ব্যাপক টাকা ছাপানো হয়েছে। এটি বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিতে হবে। তবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

এর আগে আগস্টে মূল্যস্ফীতি অনেক কমে যাবে বলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় জোর গলায় বলেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। গত ২৯ আগস্ট একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি জোর করে কমানো যায় না। কার্যকর নীতি নিতে হবে। আমি ঝুঁকি নিয়ে বলতে পারি, চলতি আগস্টে মূল্যস্ফীতি ২-৪ পয়েন্ট কমবে। এদিকে গত জুন মাসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। প্রথম ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভুগতে থাকা পাকিস্তান।

সৌজন্যে : সময়ের আলো

শেয়ার