চরম দুর্ভোগের রাস্তার রাম সিলেটের সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক। ৯ বছর ধরে সংস্কারের ছোঁয়া না লাগায় ১৮ কিলোমিটার সড়ক অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দে ভরে গেছে। এতে সড়কটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। চলতে গিয়ে নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে ছোট-বড় যানগুলো। বিশেষ করে সালুটিকর বাজার থেকে তোয়াকুল ইউনিয়নের পেকেরখাল সেতু পর্যন্ত এই রাস্তাটি মানুষের চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে করে গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং, গোয়াইনঘাট সদর, লেঙ্গুড়া, বিছনাকান্দি, রুস্তমপুর, তোয়াকুল ও নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের আড়াই লক্ষাধিক মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। পাশাপাশি বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াতকারী পর্যটকদেরও পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের সালুটিকর বাজার থেকে তোয়াকুল ইউনিয়নের পেকেরখাল সেতু পর্যন্ত ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। গত ৯ বছর ধরে সংস্কার হয়নি সড়কটি। ফলে অসংখ্য খানাখন্দে ভরা ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। প্রায়ই সড়কে বিকল হয়ে যায় যানবাহন। একটু বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, শুকনোর সময়ও সড়কে জমে থাকে কাদাপানি। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কটির বেহাল অবস্থা। অনেকটা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলতে হচ্ছে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুল-কলেজ, মাদরাসার হাজার হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচলের পাশাপাশি বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই পর্যটনকেন্দ্রে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে। কিন্তু সড়কটিতে চলার মতো অবস্থা নেই। কাদায় মাখামাখি হয়ে চলতে হয় যাতায়াতকারী মানুষ ও যানবাহনগুলোকে। বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে এ সড়ক দিয়ে যানবাহনের চালকরাও সহজে যেতে চান না। আর যারা এ সড়ক ব্যবহার করেন, তারাও দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।
স্থানীয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক সহিদ মিয়া জানান, এ সড়কে চলার কোনো উপায় নেই। একটু বৃষ্টিতেই কাদায় মাখামাখি হয়ে পড়ে। ফলে গাড়ি চালানো যায় না। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। যাদের বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের সুযোগ আছে, তারা একটু বেশি পথ ঘুরে যান।
লুৎফুর রহমান নামের আরেকজন জানান, বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে এ সড়কটির কারণে। সড়কের যে অবস্থা কোনো গাড়িচালক পারতপক্ষে এ সড়ক মাড়াতে চান না। কেউ কেউ দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া নিয়ে পর্যটকদের নিয়ে এলেও বেশিরভাগ সময় গাড়ি কাদায় আটকে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ঠেলা দিয়ে গাড়িকে এগিয়ে নিতে হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, সবশেষ ২০১৬ সালে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কটি সংস্কার করা হয়।সালুটিকর-গোয়াইনঘাট পুরো ২৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার শেষ না হতেই ভারত থেকে নেমে আসা উপর্যুপরি পাহাড়ি ঢলে সড়কটির বেশিরভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ছাড়া ২০২২ সালের বন্যায় এ সড়কটি আবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এ সড়কটির গুরকচি-গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। এ অংশটির সংস্কার কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে।
অন্যদিকে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নয়াবাজার সংলগ্ন হাটগাং সেতু, তোয়াকুল সিএনজি স্টপেজ সংলগ্ন ২ কোটি টাকা ব্যয়ে তোয়াকুল সেতু এবং বঙ্গবীর পয়েন্ট সংলগ্ন আরও ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবীর সেতুর বরাদ্দ হয়। যে সেতুগুলোর নির্মাণকাজ কয়েক দিন আগে সমাপ্ত হয়েছে। তবে নবনির্মিত ওই তিনটি সেতুর অ্যাপ্রোচের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলী (স্থানীয় সরকার বিভাগ) রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের গুরকচি থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া সড়কটির তোয়াকুল অটোরিকশা সিএনজি স্টপেজ থেকে বঙ্গবীর পয়েন্ট পর্যন্ত সংস্কার কাজে টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। সালুটিকর থেকে তোয়াকুল পর্যন্ত বাকি রাস্তা টেকসই ও মজবুত করার লক্ষ্যে সংশোধিত প্রাক্কলন নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে ঢাকায় এলজিইডির এডিবি প্রকল্প অফিসে পাঠানো হয়েছে।
সৌজন্যে : সময়ের আলো