প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসন। এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ডাকসাইটে একাধিক স্থানীয় নেতা। এ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপিতে লড়াইয়ের আভাস নেই।
অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানও নির্বাচন করতে চান। নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াছ আলী ছাড়া গত ৩/৪টি সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীরাই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
এদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ও গণফোরামের ব্যানারে বিজয়ী হওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান তিনজনই ব্রিটেন প্রবাসী ছিলেন। সংসদ সদস্য হিসেবে তারা দায়িত্বকালে থিতু হন সিলেটের রাজনীতিতে। অতীতে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও জীবিকার তাগিদে তারা ব্রিটেন প্রবাসী হন। আর এ আসনের নির্বাচনে সবসময় প্রবাসীরাই নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা লন্ডন এবং আমেরিকায় বসবাসকারীদের ম্যানেজ করতে ব্যস্ত থাকেন, কারণ প্রবাসীরা দেশে থাকা স্বজনদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানালে ভোটাররা তা শতভাগ পালন করেন।
সর্বশেষ গত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন গণফোরামের মুকাব্বির খান। স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন হওয়ায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও শুরুতে তার পরিচিতি কম ছিল। ধীরে ধীরে গত সাড়ে চার বছরে এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ করে জনসাধারণের কাছে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানান। বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী। ওয়ান ইলেভেনের সময় শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ ৪০ প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা সেনা অভিযানে গ্রেফতার হন। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর তিনি মুক্তিলাভ করেন। এর আগে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা, পাশাপাশি ব্রিটেনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পরিচিত মুখ হওয়ায় আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে। ওই সময় বিএনপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে নিখোঁজ) এম ইলিয়াছ আলীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ব্রিটেনের রাজনীতি ছেড়ে সিলেটে ফুলটাইম রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন শফিকুর রহমান চৌধুরী।
২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী। ২০১৯ সালের নির্বাচনে মহাজোট এ আসনটি উন্মুক্ত রাখায় নির্বাচনে যাননি শফিকুর রহমান চৌধুরী, তবে জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নিলেও পরাজিত হন গণফোরামের মোকাব্বির খানের কাছে। ওই নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াছ আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা মনোনয়ন জমা দিলেও শেষ মুহূর্তে আইনি কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। অন্যদিকে নতুন মুখ হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শব্দসৈনিক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী। ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবারের সন্তান হিসেবে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন সাধারণ মানুষের মাঝে। ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে দল থেকে তাহসিনা রুশদী লুনার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। দলীয় নেতাকর্মীরা একাট্টা লুনার পক্ষে। বিএনপির অন্য কোনো প্রার্থীও এ আসনে নেই। তবে আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর পাশাপাশি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলুও নির্বাচনে যাচ্ছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সমর্থকরা বেশ লেখালেখি করছেন। আর জাতীয় পার্টি থেকে ইয়াহইয়া চৌধুরীর অংশগ্রহণ অনেকটাই নিশ্চিত।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ তেমন একটা নেই। নির্বাচনের ভোটের পরিবেশ, ভোট ব্যবস্থাপনা কেমন হবে তা নিয়েও এখনও শঙ্কিত আছি। তবে স্থানীয় ভোটারদের আগ্রহ আছে আমি যেন নির্বাচন করি। দেখা যাক কী হয়?
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলের নেতাকর্মীরা সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করবেন নেতাকর্মীরা।
তিনি বলেন, জিয়াউর হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র ধ্বংসের সূচনা করেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত শব্দসৈনিক ডা. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের মানুষ চরম অবহেলার শিকার। এই এলাকায় কোনো জনপ্রতিনিধি আছেন বলে পথ চলতে মনে হয় না। কারণ রাস্তাঘাটের যে করুণ অবস্থা, তাতে পায়ে হেঁটেও পথ চলতে কষ্ট হয়। এলাকার মানুষ নতুন মুখ চান, তারা কাজের লোক চান। যিনি সবধরনের অনিয়ম দুর্নীতির ঊর্ধ্বে ওঠে জনগণের সেবা করতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমি সারাজীবন অনিয়ম-দুর্নীতি আর ধূমপানের বিরুদ্ধে কাজ করেছি। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, আমি সাধারণ মানুষের সেবার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইব।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু বলেন, আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে দলের মনোনয়ন চাইব। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। ওই সময়ে সিলেট-২ আসন জোটের জন্য ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। আমরা জোটের প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক কাজ করেছি।
তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য মাঠে যে অধিকতর জনপ্রিয়-দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমার বিশ্বাস। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয়দের কাছে সরকারের সফলতাগুলো তুলে ধরছি, ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন পাচ্ছি। মানুষ অভিভূত-বিশেষ করে তরুণ এবং প্রবাসীদের অসম্ভব সাড়া পাচ্ছি।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আমরা একদফার আন্দোলনে রয়েছি। বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ হলে এবং বিএনপি নির্বাচনে গেলে ওই আসনে প্রার্থী বদল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সৌজন্যে : সময়ের আলো