Bangla24.Net

মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জ-১ আসন

বিএনপিতে নেই প্রার্থির লড়াই, আ.লীগে অনেক মুখ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মাঠে নেমেছেন। আর একক প্রার্থী থাকায় বিএনপিতে প্রার্থিতা নিয়ে লড়াই নেই। অন্যদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও ইতিমধ্যে সংসদীয় এলাকায় ভোটের প্রচারণায় নেমে পড়েছেন জাপা-জামায়াত আর খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে সংসদীয় আসন হবিগঞ্জ-১। এই আসনে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া প্রার্থী হলে ভোটের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে। যদিও তিনি গত একাদশ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তার অনুসারীদের অভিযোগ, গত নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবার নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ড. রেজা কিবরিয়া নির্বাচিত হবেন।

এ ছাড়া এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির অবস্থান বেশ শক্ত। অন্যদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে জামায়াতে ইসলামী এবং খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী দলীয় সমর্থনের আশায় প্রচারণা শুরু করছেন। তবে বিএনপি থেকে এখন পর্যন্ত একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া।

এই আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে শাহ নওয়াজ মিলাদ গাজী। তিনি ক্লিন ইমেজের মানুষ। তিনি জানান, আসন্ন নির্বাচনেও দলের সভানেত্রীর কাছে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তিনি শতভাগ আশাবাদী দল তাকেই মনোনয়ন দেবে। অবশ্য এ বিষয়ে দলের যেকোনো সিদ্ধান্তও মেনে নিতেও তিনি সম্মত আছেন বলে জানান।

আওয়ামী লীগ থেকে যারা নির্বাচন করতে ইচ্ছুক তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বতর্মান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতা আবদুল মুকিত চৌধুরী।

লোকমুখে শোনা যায় এই আসনে প্রার্থী নির্বাচনে হিমশিম খেতে হয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে। তবে বিএনপি থেকে শেখ সুজাত মিয়া মনোনয়ন পাবেন-এটা অনেকটাই নিশ্চিত বলে দাবি করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

১৯৯১ সাল থেকে নবীগঞ্জে বিএনপিকে সংগঠিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছেন বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া। এর সুফল পান ২০১১ সালের উপনির্বাচনে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে তিনি চমক দেখান।

এর আগে একাধিকবার বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ দেওয়ান ফরিদ গাজী (প্রয়াত)। তিনি ২০১১ সালে সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে মারা যান। ওই বছরই উপনির্বাচনে শেখ সুজাত মিয়ার কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী।

বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলে পরীক্ষিত শেখ সুজাত মিয়া একক প্রার্থী হিসেবেই আলোচনায় রয়েছেন। তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগের এ ঘাঁটিতে বিএনপি শক্তিশালী হয়েছে। গেল দুবার নবীগঞ্জ পৌর নির্বাচনে শেখ সুজাতের ইমেজ এবং সরব প্রচারণায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন।

এবার জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী। নতুন প্রজন্মের ভোটারকে জাগিয়ে তোলায় তার বিশেষ গুণ রয়েছে। তৃণমূলের নেতা হিসেবে তিনি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন।

অন্যদিকে নির্বাচনি এলাকায় দলীয় মনোনয়নের জন্য মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। তিনি এমপি থাকাকালীন এলাকায় উন্নয়ন কর্মকা-ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতায় চমক দেখিয়েছেন। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন ওই এলাকার ভোটাররা। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানি প্রয়াত কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর কন্যা হিসেবে এলাকায় তার পারিবারিক ইমেজ রয়েছে। নারী জাগরণে তার অবদান মহিলা ভোটারদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। সবচেয়ে আলোচনার বিষয় বাহুবলবাসী এবার তাদের নিজ উপজেলার একজন প্রার্থী চান। সে হিসেবে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন তারা।

গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির মুনিম চৌধুরী বাবু দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। একাদশ নির্বাচনে তাকে আর মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন তিনি।

সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলীর বাড়ি বাহুবল উপজেলায়। ইতিমধ্যে দলীয় নির্দেশে তিনি এই আসনে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।

ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী আরেক শক্তিশালী দল খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হিসেবে প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল কাইয়ূম জাকীও নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, ২০১১ সালে উপনির্বাচনে দেয়ালঘড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে আগামী নির্বাচনেও অংশগ্রহণের জন্য মাঠে কাজ করছি। আর খেলাফত মজলিসের সংগঠন বাহুবল-নবীগঞ্জে আগের চেয়ে এখন অনেক শক্তিশালী।

সৌজন্যে : সময়ের আলো

শেয়ার