Bangla24.Net

শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৮ আশ্বিন ১৪৩০

হবিগঞ্জ ৪: নৌকা চান একাধিক প্রার্থী, মাঠ চাঙ্গা রাখছে বিএনপি

পাহাড়, চা-বাগান অধ্যুষিত চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার সংসদীয় আসন হবিগঞ্জ-৪। এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী যেই হোন না কেন, প্রতীক নৌকা হলেই নির্বাচনের নদী পার হওয়া সহজ হয়ে যায়। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা পেতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মরিয়া হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। তবে বিএনপি কোনো প্রার্থীকে মাঠে প্রচার চালাতে দেখা যায়নি। তারা আন্দোলনে মাঠ চাঙ্গা রেখেছেন।

চা-শ্রমিকরা কথা প্রসঙ্গে বলেন, ভোটের কাগজে নৌকা দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। শেখ বাবু আমাদের ভোটের অধিকার দিয়েছিলেন। তাদের কথার ধরন শুনলেই বোঝা যায় তারা নৌকা ছাড়া ভোট দিতে নারাজ। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী কোনো বিষয় না। তবে গত ইউনিয়ন নির্বাচনে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে। অনেক চা বাগানে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। চা শ্রমিকরা এখন আর আগের মতো অবলা নয়, তারা দেখে শুনেই এখন ভোট দেন বলে চা শ্রমিক নেতাদের অভিমত।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি নির্বাচন ছাড়া বাকি সবকটি নির্বাচনে এ আসন থেকে জিতেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী নৌকা প্রত্যাশী থাকায় দলটিতে দেখা দিয়েছে টানাপড়েন।

দলের হাইকমান্ড নির্বাচনের জন্য যাকে মনোনীত করবেন সবাই ঐকমত্যে তাকে নির্বাচিত করতে কাজ করবেন বলে জানান দিয়েছেন। এই আসনে টানা ছয় বার আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এমপি ছিলেন প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ। তার মৃত্যুর পর নৌকা প্রতীক পেয়ে টানা দুবার এমপি হন অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে এসে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

এবার এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা পেতে একাধিক প্রার্থী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও মাধবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী (অসীম), কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচিত ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতা নিজামুল হক মোস্তুফা শহীদ রানা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী আরিফুল হাই রাজিব।

তারপরও দুই উপজেলাতে ভালো মানুষ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য বিমান প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর। তিনি জানান, তার বাবা আসাদ আলী সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে পারিবারিকভাবেই তারা দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নির্বাচিত হয়ে নেতাকর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিবিড় করেছেন এবং দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- করেছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত ব্যক্তি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, সদিচ্ছা থাকলে এমপি না হয়েও এলাকায় কাজ করা যায়। আমি এমপি না হয়েও এলাকায় ৪৫টি ব্রিজ তৈরি করেছি। আগামী নির্বাচনে নেত্রীর কাছে নৌকা চাইব, তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করব না।

জেলা অওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম বলেন, তৃণমূলের প্রতিটি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু আমি একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। তাই দলীয় সভানেত্রীর কাছে আগামী নির্বাচনের জন্য নৌকা চাইব।

সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ছেলে নিজামুল হক রানা বলেন, তার বাবা সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ছয়বার এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মকাণ্ডের জন্য তার জনপ্রিয়তাও ব্যাপক। এরই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্র থেকে তিনিও সংকেত পেয়েছেন। তাই এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি।

এদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মো. ফয়সল বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করব না। দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তা হলে শেষবারের মতো নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করেছি দলের হাইকমান্ডে।

এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় আছেন আরও চার নেতা। একজন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার শিপা, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মাধবপুর উপজেলা চেয়ারম্যানা সৈয়দ মো. শাহজাহান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।

সৌজন্যে : সময়ের আলো

শেয়ার