Bangla24.Net

শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১৫ আশ্বিন ১৪৩০

সিলেট, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যা

ছবি : সংগৃহিত

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সোমেশ্বরী ও সুরমা নদীর কিছু পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপরে উঠে যাওয়ায় নেত্রকোনা, সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল ডুবে গিয়ে সাময়িক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপরে এবং সুরমা নদীর পানি ছাতকে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ও সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে।

এ ছাড়া দিরাইয়ে পুরোনো সুরমা নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এ কারণে সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগরসহ ৬ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। এদিকে টানা বর্ষণের কারণে সিলেটের সুুরমা, কুশিয়ারা, সারি, ধলাই নদীর পানি বাড়ছে। তবে এখনও তা বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। নদীর পানি বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হাওরেও বাড়ছে পানির উচ্চতা। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক জায়গায় ভাঙন হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার সোমবার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র তাদের বুলেটিনে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। তবে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ওই সব নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুশিয়ারা, মনু-খোয়াই ছাড়া প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার চলমান ‘বন্যা পরিস্থিতির’ অবনতি হতে পারে।

এদিকে নদ-নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করায় সেখানকার নিচু ভিটা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সুনামগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সুনামগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়নি। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি সহায়তা পাঠানো হয়েছে।

সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০৭.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে করে নগরীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে পানি ঢুকায় বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। পাশাপাশি সিলেট নগরীর পাঠানটুলা, মেজরটিলা. মিরাবাজার, মেডিকেল এলাকা, শামীমাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কিছু এলাকায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, তারা যে পূর্বাভাস দিয়েছেন তাতে বৃষ্টি যদি আর না বাড়ে তা হলে এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উন্নতি ঘটবে। তবে বৃষ্টি বাড়লে আরও কিছু এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়তে পারে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও আশপাশের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসায় পরবর্তী সময়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদের পানি সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙনে গত ১৫ দিনে শতবিঘা আবাদি জমি, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে আরও দেড় শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও ভাঙনকবলিত মানুষ বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে। জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের বজরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের ভাঙনকবলিতদের নিজস্ব জমিজমা না থাকায় নদীতীরবর্তী মানুষ তাদের বাড়িঘর সরিয়ে খোলা আকাশে ফেলে রেখেছে।

ঈদের ১০-১২ দিন আগে থেকেই এখানে ভাঙন চলছিল। জিও ব্যাগ দিয়ে সরকারি স্কুলটি রক্ষার চেষ্টা করা হলেও জিও ব্যাগসহ সেটি নদীগর্ভে চলে গেছে। এ সময় ভেঙে গেছে আরও ৪৫ থেকে ৫০টি বসতবাড়ি। সবজি ও পাটক্ষেতসহ শত বিঘা আবাদি জমি নদী গ্রাস করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে গাছপালা-পুকুর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

শেয়ার