Bangla24.Net

বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কানাইঘাটে ব্যবসায়ীকে বাঁচাতে প্রাণ গেল যুবকের!

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার পল্লীতে এক ব্যবসায়ীর উপর হামলা চালিয়ে ১৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীকে রক্ষা করতে এসে খুন হয়েছেন গিয়াস উদ্দিন নামের যুবক।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) দিনগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের বাউরভাগ ৪র্থ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গিয়াস উদ্দিন (৩৩) বাউরভাগ ৪র্থ খন্ড গ্রামের হবিবুর রহমানের ছেলে। এ ঘটনার সাথে জড়িত জামাল উদ্দিন নামে একজনকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা।

নিহতের লাশ ময়না তদন্তের পর বুধবার (২৮ জুন) বিকেল ৪টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর বাদ মাগরিক নিহত গিয়াস উদ্দিনের জানাজার নামায বড়বন্দ বাজার মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, বাউরভাগ ৪র্থ খন্ড গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে স্থানীয় বড়বন্দ বাজারের ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিন (৫০) গত মঙ্গলবার রাত অনুমান দেড়টার দিকে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। শাহাব উদ্দিন তার নিজ বাড়ির পাশে আসামাত্র সেখানে একই গ্রামের জাহির আলীর ছেলে সিরাজুল হক, সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের শফিকুল হকের ছেলেসহ ইমন উদ্দিন, একই গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের ছেলে নেওয়াজ উদ্দিন সহ অপরিচিত আরো ২ জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন।

এ সময় তারা এখানে কেনো দাঁড়িয়ে আছে জানতে চাইলে তারা শাহাব উদ্দিনকে বলেন, তাদের কিছু ভারতীয় মালামাল এদিকে আসছে। তখন শাহাব উদ্দিন তাদের পাশ কেটে বাড়ি যেতে চাইলে তারা পথরোধ করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারপিট করে শাহাব উদ্দিনের সাথে থাকা ব্যবসার প্রায় ১৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি হামলাকারী জামাল উদ্দিন নামে একজনকে ঝাপটে ধরে চিৎকার শুরু করলে টাকা লুটকারী অপর ৪ জন দৌড়ে পালিয়ে যায়। তখন শাহাব উদ্দিন একই গ্রামের গিয়াস উদ্দিনকে ফোন করে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার জন্য বলেন। শাহাব উদ্দিনের চিৎকারে তার ছেলেসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে হামলাকারী জামাল উদ্দিনকে আটক করেন।

একপর্যায়ে শাহাব উদ্দিন গিয়াস উদ্দিনকে আবারো কয়েকটি ফোন দিলে তার ফোন রিসিভ না হওয়ায় এলাকার লোকজন গিয়াস উদ্দিনকে খোঁজতে বের হন। তখন একই গ্রামের মৌলভী খলিলুর রহমানের বাড়ির পশ্চিম পাশের ক্ষেতের মাঠে গিয়াস উদ্দিনের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তারা। এতে উপস্থিত লোকজনের ধারনা শাহাব উদ্দিনের ফোন পেয়ে তাকে রক্ষা করতে গিয়াস উদ্দিন ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে আসার সময় পালিয়ে যাওয়া অপর ৪ জন হামলকারীর হাতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সে খুন হতে পারেন।

তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাও. জামাল উদ্দিন সহ আরো অনেকে কানাইঘাট থানা পুলিশকে অবহিত করলে রাতেই কানাইঘাট সার্কেলের এএসপি আব্দুল করিম, থানার ওসি গোলাম দস্তগীর সহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি নিহত গিয়াস উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করেন এবং ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছে তার বিস্তারিত জানেন।

এ সময় এলাকাবাসী ঘটনার সাথে জড়িত আটক জামাল উদ্দিনকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। এদিকে টাকা লুটসহ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপর ৪ জনকে গ্রেফতার করতে থানা পুলিশ এলাকায় ষাড়াসি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

এ ব্যাপারে থানার ওসি গোলাম দস্তগীরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শাহাব উদ্দিনের উপর হামলা চালিয়ে যারা টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তারাই গিয়াস উদ্দিনকে হত্যা করেছে। ঘটনার সাথে জাড়িত থাকার দায়ে তাৎক্ষণিক সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের সুনাম উদ্দিনের পুত্র জামাল উদ্দিনকে আমরা আটক করেছি এবং এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করতে এলাকায় পুলিশের ষাড়াসি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শেয়ার